হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হকৃবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) পাবলিক হেলথ এন্ড এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-সচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। একই দিনের অপর আদেশে বর্তমান হকৃবির ভিসি প্রফেসর ড. মো. আব্দুল বাসেতকে অব্যাহতি দিয়ে মূলপদে যোগদানের জন্য বলা হয়।
জানা গেছে, ড. সায়েম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দানকারীদের মধ্যে অন্যতম। শুধু তাই নয়, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ (গশিপ) মনোনীত প্যানেল থেকে ২০২২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। যদিও এর আগেও তিনি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। এদিকে, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ড. সায়েমকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু ফাউডেশনের আজীবন সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদকে হকৃবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিকৃবির সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুব ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহানা কাওছার।
এছাড়াও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিকৃবি চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম রাশেদ হাসনাত ও সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মো মাছুদুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিকৃবির সমন্বয়ক টিম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিকৃবি ইউনিটের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো ছিদ্দিকুল ইসলাম ও সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. সামিউল আহসান তালুকদার।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিকৃবি সমন্বয়ক কৃষিবিদ আজিজুর রহমান এক প্রতিবাদবার্তায় বলেন, যে খুনি হাসিনা হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, সেই খুনি হাসিনাকে ৪ আগষ্ট পর্যন্ত সমর্থন দিয়ে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে আন্দোলনকারী গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সাবেক সভাপতি ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিনকে হবিগঞ্জ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা জুলাই গনহত্যার শহিদদের সাথে বেঈমানির সমতুল্য। বুধবারের মধ্যে এই নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে হকৃবি সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়- সিকৃবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গশিপের সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য, গশিপ মনোনিত প্যানেল থেকে সাদা দলকে ভয় দেখিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ একজন কট্টর আওয়ামী সমর্থক। তিনি পতিত সরকারের আমলে সিকৃবিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দূর্নীতিবাজ উপাচার্যদের ব্যবহার করে সিকৃবিতে নিয়োগ বানিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দানকারী অধ্যাপক সায়েম উদ্দিন আহম্মদকে হকৃবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা জুলাই-আগস্টের শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করার সামিল। এই নিয়োগ কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। তারা অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ নিয়োগের পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
হকৃবি সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের আত্মীয় হওয়ায় আওয়ামীপন্থী এই শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় আর অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদের বাড়ি হবিগঞ্জ সদরে। আবার তারা একে অপরের আত্মীয় হন।
এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।