ব্যাংকিং সাংবাদিকতা ও বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে যারা লেখেন সেসব সাংবাদিকদের ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে যাতায়াত একটি রুটিন কাজ।
দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের যখন ভঙ্গুর অবস্থা, অর্থনীতি যখন নানা কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠিক তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। আর এই কঠোরতার বিপরীতে যুক্তি সেনসেটিভ তথ্য সাংবাদিকদের হাতে চলে যাচ্ছে। তারা আরও একটি খোঁড়া যুক্তি তুলে ধরছেন তা হলো-পৃথিবীর কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকরা অবাধে ঢুকতে পারে না।
প্রায় ৮ বছর ব্যাংকিং রিপোটিং করার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে গভীরভাবে মেশার সুযোগ হয়েছে। নির্ধিদায় বলা যায়- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশিরভাগ কর্মকর্তা সৎ এবং দক্ষ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায়। সাংবাদিক প্রবেশ নিয়ে সমস্যাটা আসলে তাদের নয়।
সমস্যা আমলা গভর্নরের। তিনিই মূলত নতুন এই নীতি চালু করেছেন। যিনি একের পর এক ভুল নীতি নিয়ে, কিছু গোষ্ঠিভুক্ত ব্যাংককে সাপোর্ট দিয়ে ব্যাংক খাতের লেভেল প্লেইং ফিল্ড নষ্ট করছেন।
নানা কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে তার স্বায়ত্তসাশন হারিয়েছে সেটা নতুন কিছু নয়, তবে অবাধ তথ্য প্রবাহে বাধা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো অর্থনীতিরই বিপদ বাড়াবে।
যারা যুক্তি দিচ্ছেন- অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারেন না। তাদের কাছে প্রশ্ন- কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঋণ খেলাপি আর বড় বড় কর্পোরেটদের অবাধ যাতায়াত আছে?
কোন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু গোষ্ঠির পারপাস পূরণে ব্যতিব্যস্ত থাকে? কোন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয় ? কোন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স সত্বেও সেই দেশের ব্যাংকের প্রতি মানুষ আস্থা হারায়। কোন কোন দেশের একটি নন ব্যাংক আর্থিক খাত ধ্বংস হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু লোলুপ কর্মকর্তার কারণে? কোন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য লুকাতে ব্যতিব্যস্ত?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোরতা আরোপ করলেও ব্যাংকিং সাংবাদিকতা ও রিপোটিং শেষ হয়ে যাবে না। বিকল্প তথ্য প্রবাহ তৈরি হবে। হয়তো সাংবাদিকদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সাংবাদিকতা পরিপন্থী নীতি অর্থনীতির জন্য হুমকি হবে এটা বলা যায়।
সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ না।
মো: মেহেদী হাসান
সিনিয়র রিপোর্টার
দ্য ডেইলি স্টার