দেশে সেনা শাসন আসার কোনো প্রেক্ষিত নাই: মাহফুজ

দেশে সেনা শাসন আসার কোনো প্রেক্ষিত নাই বলে জানিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, নতুন করে ওয়ান ইলেভেনের কোনো শঙ্কা নাই, তাই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। আমাদের লক্ষ্য একটি সুস্থ ও অবাধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপহার দেয়া। তবে শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের জন্য সেই নির্বাচন নয়। কারণ, দেশের গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছি। তাই আগামী যেকোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না।
গতকাল শনিবার বিকালর লক্ষীপুরের রামগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ দিল্লির কোলে আশ্রয় নিয়ে ফস ফস করছে। ফ্যাসিস্ট পরাজিত হলেও দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। যারা বাংলাদেশের বিরোধী, জনগণের অধিকার বিরোধী তাদেরকে এ দেশে আর পুনর্বাসন দেয়া হবে না। যেকোনোভাবেই আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো বাংলাদেশপন্থীদের ভেতর ফ্যাসিবাদ বিরোধীরা শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়। সংস্কারগুলো করার জন্য সরকারকে সহযোগীতা করি। প্রতিষ্ঠান সংস্কার হলে উপকৃত হবে বাংলাদেশের জনগণ, উপকৃত হবে বৈষম্য বিরোধী জনগণ। আপনাদের সদিচ্ছা থাকলে সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার পর সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক উপায় ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে আগাবো আমরা।
উপদেষ্টা বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছি, কোন রকম রাজনৈতিক পক্ষপাত করতে চাই না। রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো রাজনৈতিক দল রাজনৈতিকভাবে করবেন। বাংলাদেশপন্থী কারো সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু দিল্লির তাবেদারি করার কোন প্রচেষ্টা হলে তাদের সঙ্গে বিরোধ হবেই হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরে যারা শহীদ হয়েছেন আমরা তাদেরকে পাবো না। কিন্তু তাদের যে স্পিড, চেতনা, তা আমাদের রক্তের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হবে। আমরা তাদেরই উত্তরসূরী। তারা যে স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছেন সেই ধারণা থেকে আমাদের পথচলা। ৫ ই আগস্ট এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ পেয়েছিলাম কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের মধ্যে ঐক্যের ঘাটতি রয়ে গেছে। আমরা এখনো বুঝতে পারিনি, আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিকভাবে পরাজয় বরণ করে তারা শেষ হয়ে যায়নি বরং দিল্লির কোলে আশ্রয় নিয়ে তারা ফোস-ফোস করছে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমি বলতে চাই এটা আমাদের প্রজন্মের লড়াই। এটা আমাদের ফ্যাসিবাদী বিরোধী শক্তির ও রাজনীতির স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার লড়াই। কোনভাবে যদি আবার আওয়ামী লীগ ভারতের কোল থেকে আমাদের দিকে চোখ রাঙ্গায় আমরা কি বসে থাকবো? তখন উপস্থিত জনগণ বলে না না না। আমরা বসে থাকবো না আমরা শহীদদের শাহাদাতের পথ ধরে রক্ত দিব। আমরা শুধু ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের শাসনব্যবস্থা উৎখাত করে সন্তুষ্ট নই। আওয়ামী লীগের যতদূর আছে রাষ্ট্রীয় সেক্টরে সমাজে সংস্কৃতিতে প্রত্যেককেই আমরা বিচার করব। তাদের বিচার করেই আমাদের শহীদের যে আকাঙ্ক্ষা আছে সেদিকে আমরা এগোবো।
বিচারের সাথে সাথে আমরা সংস্কারের কথা বলছি এমনটি জানিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার কমিশন থেকে যেগুলো রিপোর্ট এসেছে, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারগুলো না করলেই নয় নির্বাচনের পূর্বে সে সকল সংস্কার করতে চাই। সংস্কার শুধু মুখের বুলি নয়। যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো আপনাকে টিকিয়ে রেখেছিল সেই প্রতিষ্ঠানগুলো একই রকম রেখে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি না। যেসব প্রতিষ্ঠানে হাসিনা দালালরা আছে তাদের বিচার করেই আমাদেরকে নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দিদারুল ইসলাম, উপজেলা জামাত আমির নাজমুল হাসান পাটোয়ারী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অপু সাহা,মুক্তিযোদ্ধা মন্টু মিয়া, ইসলামি আন্দোলন রামগঞ্জ শাখার সভাপতি ডা. রফিকুল ইসলাম, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুর রহমান তুহিন, জয়নাল আবেদীন শিশির সহ প্রমুখ।
এরআগে লক্ষ্মীপুরে যাওয়ার পথে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে এক পথ সভায় মাহফুজ আলম বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বাংলাদেশে দিল্লি পন্থিরা আর সুযোগ পাবে না। যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে তাহলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। আমরা বিএনপি-জামায়াত এবং সব ধরণের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থাকে উৎখাত করেছি। এ দেশে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার আর সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, হাসিনা যে সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলো সেগুলো সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যাবে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গেলে মানুষ কখনোই বৈষম্য ও নিপিড়নমুক্ত হতে পারবে না। তাই সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন এবং সকল রাজনৈতিক এবং অংশিজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন করা হবে।
মাহফুজ বলেন, এ দেশ বাংলাদেশপন্থিদের হাতে থাকবে। বাংলাদেশে দিল্লিপন্থিদের আর স্থান হবে না।