কারেন্সি সোয়াপ কি?
শাব্দিক অর্থে সোয়াপ অর্থ মুদার বিনিময় বা অদলবদল। সাধারণত: ডলার বা অন্য কোনো হার্ড কারেন্সিকে (প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রাসমূহ) এড়িয়ে দুটি দেশ নিজ নিজ মুদ্রায় বাণিজ্য করলে সেটাকে আর্থিক পরিভাষায় বলা হয় 'কারেন্সি সোয়াপ' বা মুদ্রাবিনিময়। অন্যভাবে বলতে, যেসকল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ সামান্য কিংবা কম তারা বিপদে পড়লে অন্য দেশ থেকে তাদের টাকা তাদের ব্যাংকে সঞ্চিত রাখার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে আর এ পদ্ধতিকেই কারেন্সি সোয়াপ বলা হয়।
এক দেশ অন্য দেশের সাথে সোয়াপ বিনিময় করতে পারে। আবার দেশের মধ্যেও এক ব্যাংক অন্য আরেকটি ব্যাংকের সাথে সোয়াপ করতে পারে। সাধাণভাবে টাকা এবং ডলারের মধ্যে সোয়াপ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোন ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার জন্য সাময়িক সংকটে পড়লে টাকা রেখে স্বল্প সময়ের জন্য ডলার নেয়। উক্ত ব্যাংকের হাতে আবার ডলার আসলে নির্ধারিত সুদসহ আবার তা পরিশোধ করতে হয়। তখন জমা রাখা টাকা ফেরত পায় ব্যাংকটি। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে, একটি দেশের কাছে সর্বনিম্ন ০৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। তা না থাকলে সোয়াপের শরণাপন্ন হতে হয়।
কারেন্সি সোয়াপ বা আন্তঃদেশীয় মুদ্রা বিনিময় অনেকটা ‘ব্যাংক টু ব্যাংক লেন্ডিং’ এর মত হওয়া ঝুঁকি কম থাকে। যেমন শ্রীলংকা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়ে। এ কারণে ২০২১ সালে শ্রীলংকা বাংলাদেশের কাছে ২০ কোটি ডলার ঋণ চায়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদনের মাধ্যমে ঋণ ছাড় করে। মোট ৩ কিস্তিতে মোট ২০ কোটি ডলার ঋণ হিসেবে ছাড় করা হয়।সোয়াপ উপকরণের আওতায় এ ঋণ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টি দেয় শ্রীলঙ্কার সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ২০ কোটি ডলার সমমূল্যের শ্রীলঙ্কান রুপি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিয়েন হিসেবে জমা দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরবর্তীতে সুদ সহ সমুদ ঋণ পরিশোধ করে এবং সমপরিমাণ রুপি দেশটিকে ফেরত বাংলাদেশ ব্যাংক। শ্রীলংকা যদি এই টাকা ফেরত দিতে না পারে তখন বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার মধ্যে যে বৈদেশিক বাণিজ্য হয়, সেখানে দেনাপাওনা থেকে এই টাকা সমন্বয় করা সম্ভব।
এই ঋণের জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে লাইবরের (লন্ডন আন্ত ব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হয়। তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য দিতে হবে লাইবরের সঙ্গে অতিরিক্ত ২.৫০ শতাংশ সুদ। ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কারেন্সি সোয়াপের পরিমাণ ৪০ কোটি ডলার। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এই কারেন্সি সোয়াপের মেয়াদ ছিল। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বেশি কারেন্সি সোয়াপ সম্পন্ন করে চীনের সঙ্গে। গত মার্চ ২০২১ চীনের সঙ্গে দেড় বিলিয়ন ডলার বা ১০ বিলিয়ন চায়নিজ ইয়েন সোয়াপ করার চুক্তি হয়।
ফেসবুক থেকে নেয়া….