উদ্যোক্তা তৈরির ফান্ড প্রভাবশালীদের পকেটে
২০০১ সালে দেশের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল অথচ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত সফটওয়্যার শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এক্যুইটি এন্ড অন্ট্র্যাপ্র্যানারশীপ ফান্ড (ইইএফ) গঠন করে সরকার। সেসময় শিক্ষিত ও কর্মক্ষম যুবক শ্রেণীর কর্মসংসহান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাজেট থেকে ১০০ কোটি টাকার দিয়ে এই ফান্ড গঠন করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকাসহ বর্তমানে এই ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি) ও অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুরুর দিকে এই বিনিয়োগের বিপরীতে মামলার বিধান না থাকায় প্রভাব খাটিয়ে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক প্রভাবশালীরা এই ফান্ড থেকে অর্থ নিয়ে আর ফেরৎ দেননি। এতে একদিকে সরকারি অর্থ যেমন আত্মসাৎ হয়েছে তেমনি যে উদ্দেশ্যে এই ফান্ড গঠন করা হয়েছে তার লক্ষ্যও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে মোট ২ হাজার ৬৩টি প্রকল্পে ৩ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৯টি প্রকল্পে ঋণ বিতরণ করা হয় ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। এসব অর্থের আদায় হয়েছে মাত্র ৫১৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম ৮ বছরে ২৩৬টি প্রকল্পে ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলো। যার মধ্যে মাত্র ২০টি প্রকল্পে মাত্র ৪০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। ওই সময় অনিয়মনে কারণে তৎকালীন গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইইএফ প্রকল্পের বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়। পরে পরে ২০০৯ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের বিনিয়োগে সাব-এজেন্সি হিসেবে আইসিবির সাথে ১০ বছরের চুক্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন প্রতিষ্ঠানটিই এই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে।
তথ্য বলছে, বর্তমানে ৮ বছর অতিক্রান্ত প্রকল্পের সংখ্যা ৭৪৭টি প্রকল্প। বিনিয়োগ করা হয়েছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পগুলো থেকে আদায় হয়েছে ৪৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এসব প্রকল্পে ৭৮৬ কোটি টাকাই লুটপাট হয়েছে। যদিও বিধি অনুযায়ী বিতরকৃত অর্থ ৮ বছর পরেই সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে। কিন্তু ২০ বছরে সিংহভাগ অর্থ অনাদায়ী রয়েছে। এছাড়া ৩ থেকে ৮ বছর মেয়াদী ২৮২টি প্রকল্পে বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫১ কোটি টাকা। এসব প্রকল্প থেকে আদায় হয়েছে মাত্র ২৭ কোটি টাকা। নীতিমালার কারণে অর্থঋণ আদালতে যেতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা আইসিবি। তবে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত ২৭৪টি মামলা করেছে আইসিবি। এসব মামলার মাত্র ৭টিতে ডিক্রি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর মামলা করার পর এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ২৮ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে যারা এসব প্রকল্পের অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের দায় দায়িত্ব নিরুপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিট গঠন করা হয়েছে। কথা ছিলো দুই মাসের মধ্যেই এই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিবেন। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও জমা হয়নি প্রতিবেদন।
ইইএফে ব্যাপক জালিয়াতি ও মামলার সুযোগ না থাকায় অর্থ উদ্ধারের আইনের সুযোগ রেখে ঋণ তহবিলের নাম পরিবর্তন করে এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) গঠন করা হয়। এই তহবিল থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২ শতাংশ সুদে ১৩ টি প্রকল্পে ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঋণ হিসাবে বিতরণ করা হয়। যা আদায়ে এখনও সময় হয়নি।
এদিকে চলতি বছর আইসিবি জাতীয় সংসদের কাছে ১৯৮টি প্রকল্পের পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ প্রকল্প উৎপাদনে, ৭৫টি প্রকল্প আশিংক উৎপাদনে, ৪৭টি প্রকল্প স্থবির এবং ১৮ প্রকল্পের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম ৮ বছরে ২৩৬টি প্রকল্পে ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলো। যার মধ্যে মাত্র ২০টি প্রকল্পে মাত্র ৪০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। ওই সময় অনিয়মনে কারণে তৎকালীন গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইইএফ প্রকল্পের বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়।
সিএজি এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বগুড়া জেলার আদমদিঘীর কদমার ইফাডাফ এ্যাকুয়া লিমিটেডে ২০০৪ সালে আগস্ট মাসে মাছের হ্যাচারি ও মাছ চাষের জন্য বিপরীতে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ইইএফ। একই বছরের নভেম্বরে মিশ্র সার উৎপাদনে জেলার শিবপুরে অবস্থিত শারীব এগ্রো নামে অপর প্রতিষ্ঠানে ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। ৬৪ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জিডিপিতে বার্ষিক ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা যোগান দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে গড়ে উঠেছিলো ইফাডাফ। যদিও মৎস উৎপাদন ও মৎস চাষের এই প্রকল্পে যেই জমি দেখানো হয়েছিলো সেগুলো পুরোটাই সরকারি খাস জমি। আর কৃষিখাতে অবদানের প্রতিশ্রুতিতে গড়ে উঠা শারীব এগ্রোও বন্ধ হয়ে গেছে অল্প দিনেই।
অনুষন্ধানে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠান দুটি ২০০৫-০৬ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নওগাঁ-৬ আসনের সাবেক সাংসদ আলমগীর কবিরের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বুলুর। ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে ইইএফ থেকে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বর্তমানে বিএনপি থেকে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে শারীব এগ্রো প্রথম দিকে চালু হলেও অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। আর ইফাডাফ অ্যাকুয়া প্রকল্পের হ্যাচারি কোন অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া গেলেও কয়েকটি পুকুরে মাছে পুনা চাষ করা হচ্ছে। মামলা করার পরও এসব অর্থ ফেরত দেয়নি উদ্যোক্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের মালিক ও বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, হ্যাঁ ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতটুকু পরিশোধ হয়েছে তা দেখে বলতে হবে। আমি এখন গাড়িতে আছি। পরে কথা বলবো। এরপর তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
সিএজির তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইইএফ থেকে ৬৩ লাখ টাকার বিনিয়োগ নেয় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শরিফাবাদে অবস্থিত কুতুবুল আউলিয়া মৎস খামার। বিনিয়োগ নেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি আইসিবির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেননি। পরে নিরিক্ষক দল হবিগঞ্জ সদরের শরিফাবাদ এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দুইজন তত্ত্বাবধায়কের উপস্থিতি পেয়েছেন। যদিও প্রকল্পের কোন অফিস ঘর বা সরঞ্জামও পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব বা অন্যান্য কোন তথ্যও সংরক্ষণ করা হয়নি। পরে প্রকল্পের প্রধানের সাথে নিরিক্ষক দল দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা করেননি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুতুবুল আউলিয়া মৎস খামারের মালিকানায় ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আজিজুল বারী কামাল। ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তিনি অর্থ নিয়ে তা আর পরিশোধ করেননি। পরে ২০১৪ সালে এই প্রকল্পের মালিক আজিজুল বারী কামাল সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুবরণ করলে এই প্রকল্পের দায়িত্ব নেন তারই ভাই জাসদ নেতা শফিকুল বারি আওয়াল। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বর্তমানে প্রকল্পটি আংশিক চালু রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক চাষ নেই পুকুরগুলোতে। যদিও ইইএফ প্রকল্পের ঋণ দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছেন দায়িত্বে থাকা আওয়াল। তিনি বলেন, আমরা এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দিতে পারবো।
২০০৩ সালের নভেম্বরে গ্রিণটেক গ্রীণ হাউজকে ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইইএফ। এ ক্ষেত্রে ইইএফের নীতিমালা অমান্য করেই প্রতিষ্ঠানটির জমির স্বত্ব যাচাই না করেই এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, যেই জমির বিপরীতে এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার দাম দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি টাকার বেশি। যদিও ওই জমির বাজার মূল্য ছিলো ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক (সাবেক) আবদুল আউয়াল পাটওয়ারী ও তার সহযোগী শাহ আলমের। ইইএফের বিনিয়োগের এসব অর্থের ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা আবদুল আউয়াল পাটওয়ারী ও তার সহযোগী শাহ আলমের অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর করে তা সরিয়ে ফেলা হয়। এই অর্থের কোন টাকাই ইইএফ প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়নি।
এছাড়া আবদুল আউয়াল পাটওয়ারীর অন্য প্রতিষ্ঠান পাটওয়ারী পটেটো ফ্লাক্সকে চিপস উৎপাদনের জন্য ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে আরও ৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। এক ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানে ইইএফ থেকে অর্থ বরাদ্ধ করা নীতিমালা বিরোধ হওয়ার পরও প্রভাব খাটিয়েই এই ঋণ নিয়েছেন আবদুল আউয়াল। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনটিই উৎপাদনে যেতে পারেনি। বিধি বহির্ভূতভাবে ইইএফের অর্থ ছাড় করা সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ না করা চাকরী বিধিমালার পরিপন্থি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে আইসিবি মামলা করেছে। তবুও টাকা ফেরৎ দেয়নি উদ্যোক্তা।
শুধু রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাই নয়, সরকারের এই ফান্ডে অর্থ মেরেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও। নিজের নামে অর্থ ছাড়া না করলেও স্ত্রী, আত্মীয় বা বন্ধুদের মাধ্যমে এই প্রকল্পের অর্থ হাতিয়েছেন তারা।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার সিপাইপাড়ায় হলুদ ও মরিচের গুঁড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ইইএফ থেকে কিছু শর্তে তিন কোটি ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ নেন রয়েস হর্টিকালচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিরণ শংকর রায়। কিন্তু পাঁচ একর জমি আইসিবিকে দেখালেও একই জমির দলিল এমটিবির ঠাকুরগাঁও শাখাতেই বন্ধকি ছিল। এছাড়া সুপারি চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য রয়েস এগ্রো ফারমার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুপন রায়ের অনুকূলে দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা ইইএফ সুবিধা মঞ্জুর করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার স্ত্রী রুম্পা রায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক সুকমল সিনহা চৌধুরীর সুপারিশে এই বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। বর্তমানে এই দুই প্রকল্পের পুরো টাকাই অনাদায়ী। এমনকি মামলার পরও এসব অর্থ ফেরৎ আসেনি।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. ইউনুস আলী তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস তহুরাকে পরিচালক ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রউতান এলাকার নজরুল ইসলামকে প্রধান উদ্যোক্তা সাজিয়ে ২০০৩ সালের স্টার মিল্ক প্রোডাক্টস লিঃ নামে একটি কোম্পানি গড়ে তোলেন। প্যাকেটজাত দুধ, দধি, ছানা ও ঘি উৎপাদন করা হবে বলে এই প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ইইএফ থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু মামলাসহ নানা কারণে ওই অর্থ ফেরৎ দিয়েছেন ইউনুস আলী। তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান তো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে যেসব ঋণ ছিলো সেগুলো সুদসহ পরিশোধ করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর কামরুল হাসান আজাদ ২০০৪ সালে প্রভাব খাটিয়ে ইইএফ ফান্ড থেকে ঋণ নিয়ে লালমনিরহাটের মহেন্দ্রানগর এলাকায় গড়ে তোলেন লালমনি ফিসারীজ হ্যাচারী এন্ড ফিড মিলস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থছাড়ের পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগুলো সুন্দরভাবে তৈরি করেন। পরে ইইএফ সেখানে ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগের প্রায় ৫ বছর পর ২০১২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির এক পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রকল্পটির হ্যাচারি ইউনিট ও ফিড মিল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আর ২৫টি পুকুরের ৪/৫টিতে মাছের পোনা চাষ করা হচ্ছে।
তবে সম্প্রতি এক পরিদর্শনে দেখা গেছে, মেজর কামরুল হাসান মারা যাওয়ার পর তার এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন তার ছেলে ও মেয়ে। লালমনি ফিসারীজ হ্যাচারী এন্ড ফিড মিলসের মধ্যে পুকুরগুলোতে মাছের চাষ হচ্ছে। তবে ফিড মিল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বড় দায়-দেনার কারণে কামরুলের ছেলে মেহেদী হাসান প্রতিষ্ঠানটি হারাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার সিরাজুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম খান লিজ দিয়েছেন। সেখান থেকে আসা অর্থ দিয়েই পরিশোধ হচ্ছে পূর্বে দেনা।
জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কামরুল সাহেবের ছেলে থেকে মাছ চাষ করার জন্য লিজ নিয়েছি। মেহেদিও এর সাথে পার্টনার আছে। আমরা বৈশাখ থেকে বৈশাখ মাছ চাষ করি। মাছ বিক্রির পর আমাদের পার্টনারদের হিসাব দেওয়া হয়। এবছর পানি হতে দেরি হয়েছে। তাই মাছ ছাড়তেও দেরি হয়েছে। আর ব্যাংকের ঋণের বিষয়ে তারা আমাদের কিছু জানায়নি।
এছাড়া, বায়োটেক ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ডা. ফেরদৌসী বেগম প্রভাবশালী খাটিয়ে ইইএফ থেকে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে গড়ে তুলেন ফেরদৌস বায়োটিক। ২০০৪ সালে ইইএফ থেকে অর্থ নিলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি থেকে মাত্র ১৪ লাখ টাকা ফেরৎ এসেছে। একই অবস্থা বাগেরহাটের লকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শেখ শরীফ উদ্দিন মিঠুর গড়ে তোলা সালমান পল্ট্রি এণ্ড হ্যাচারির। ২০১২ সালে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা নিয়ে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠান থেকেও ফিরত আসেনি কোন অর্থ। বর্তমানে হ্যাচারিটি চালু থাকলেও বাণিজ্যিক উৎপাদনে নেই। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এই সাবেক চেয়ারম্যান এখন গ্রামেও বসবাস করেন না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির ইইএফ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আল আমিন তালুকদার বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা শর্ত পরিপালন করেছে কিনা আমরা সেসব বিষয়গুলো দেখি। তিনি কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি কিনা তা দেখা হয় না। সেক্ষেত্রে কোন কোন প্রভাবশালীর প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়ে থাকতে পারে। সেটা তো উদাহরণ নয়।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সরকার ইইএফ গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দিকে সেই বিনিয়োগের দায়িত্বে ছিলো। এখন দায়িত্ব আইসিবির হাতে। সুতরাং এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করাই ভালো।