গ্যারান্টির বাইরেও তারল্য সহায়তা পাচ্ছে দুর্বল ব্যাংক
দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা সংকটে পড়ে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। গত তিন মাসে এসব ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা তাদের আমানতের অর্থ তুলতে পারছেন না। এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে ভালো ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা প্রদান করেছিল। তবে, এই পদক্ষেপেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ফলে, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টির বাইরেও তারল্য সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করছে। এর জন্য ব্যাংকগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। যে ব্যাংকগুলো যৌক্তিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দেবে, সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিরিক্ত সহায়তা পাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক তারল্য সহায়তা:
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মোট ৬ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা গ্যারান্টির আওতায় ভালো ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে, এসব অর্থ ব্যবহারের পরও দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি, এবং তারা এখনো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ।
ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন উদ্যোগ:
সূত্র বলছে, আমানতকারীরা ব্যাংকগুলোতে গিয়ে তাদের টাকা তুলতে পারছেন না, ফলে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য আমানতকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুনভাবে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করছে। তবে, এসব সহায়তা পাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে একটি সুসংহত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকতে হবে। যদি পরিকল্পনাটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়, তবে গ্যারান্টির বাইরেও বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে।
ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক:
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গভর্নর নিয়মিত বৈঠক করছেন এবং তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা শোনা হচ্ছে। যদি তারা যৌক্তিক পরিকল্পনা দিতে সক্ষম হয়, তবে তাদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের বৈঠক:
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাদের আর্থিক অবস্থা এবং খারাপ সম্পদগুলো উত্তোলনের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করেছেন এবং আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থান, এস আলমের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন এবং ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার, ওই দুটি ব্যাংক তাদের পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়ার কথা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আর শিখা কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। তবে, তিনি জানিয়েছেন যে, গ্যারান্টির বাইরেও সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।