এস আলমের শেয়ার বিক্রি

১০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ছাড়তে চায় ইসলামী ব্যাংকের

  নিজস্ব প্রতিবেদক
  প্রকাশিতঃ রাত ১২:৩১, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • কোন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ হতে দেওয়া হবে না: গভর্নর

ইসলামী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ৫০ শতাংশই দুইটি গ্রুপের দখলে। ওই গ্রুপগুলোর এলসির দায়ও শোধ করতে হচ্ছে ব্যাংকটিকে। এতে আমানত ও ঋণের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এই গ্যাপ পুরণ করতে নতুন করে ১০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার ছাড়ার চিন্তা করছে দেশের সর্ববৃহৎ শরীয়াহ ভিত্তিক এই ব্যাংক। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবাইদুল্লাহ আল মাসুদ। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, মুখপাত্র হুসনে আর শিখাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানকেই বন্ধ হতে দিব না। এটাই হলো আমাদের লক্ষ্য। এস-আলম‌ই হোক বা বেক্সিমকোই হোক প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সম্পদ। প্রকৃত মালিক থাকুক বা না থাকুক প্রতিষ্ঠানগুলো চালানোর ব্যবস্থা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক কর্মচারী কর্মরত আছেন। দেশ উৎপাদনের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে, তাদের সাথে ব্যাংকের‌ও সম্পর্ক রয়েছে। এগুলোতো বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। কাজেই, আমাদেরকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান কিন্তু আলাদা। যাতে ফান্ড ডাইভারশন না হয়। এটা আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। কোন প্রতিষ্ঠানকে আমরা মারতে দেব না। প্রতিষ্ঠান মারা খুব সহজ কিন্তু গড়ে তোলা অনেক কঠিন। এবং অনেক সময়ের ব্যাপার। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দেশ উপকৃত হয় জাতীয় উপকৃত হয়। আমরা ব্যর্থ হতে চাই না। প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যর্থ হতে দিব না।

গভর্নর বলেন, গভর্নর আরো বলেন, তাড়াহুড়া বা ইমোশন অল্প সময়ের জন্য মানুষকে উত্তেজিত করে। কিন্তু ইমোশন দিয়ে দেশ চালালে সেটা ভালো হয় না। আমাকে বাস্তববাদী হতে হবে। পাশাপাশি সঠিক নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে। 

তিনি বলেন, সবার আমানতের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সবার আমানত ফেরত দেওয়া। এজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করা হবে। তবে সেটা বাচ্চা নয়, ললিপপ চাইল, আর দিয়ে দিলাম। এ রকম হবে না। সব হিসাব-নিকাশ করে টাকা দেওয়া হবে।

ইসলামি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ইসলামী ব্যাংকে বড় দুইটি গ্রুপের ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশ। তারা যেই এলসি খুলেছিলো তার বিলও আমাদের পরিশোধ করে দিতে হয়েছে। এতে আমাদের গ্যাপ তৈরি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা সমন্বয় করা হবে। আর বাকি অর্থ উত্তোলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমতিক্রমে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার বাজারে ছাড়ার চিন্তা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের শেয়ার সংখ্যা ১৬০০ কোটি। এই শেয়ার বিক্রির জন্য আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে মামলা করবো। আশা করি জানুয়ারির মধ্যেই এই শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেওয়া সম্ভব হবে। এজন্য আমরা ইসলামী ব্যাংকের পূর্বের সব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য আহবান জানাবো। পাশাপাশি দেশিয় কোন প্রতিষ্ঠান যদি শেয়ার ক্রয় করতে চায় তাহলে তাদের কাছেও বিক্রি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, শীগ্রই ভিসা পেলে আমরা সৌদি যাবো। সেখানে ইসলামি ব্যাংকে আল রাজি ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সহ আগের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সৌদি যাবো। তাদের বিনিয়োগ আবারও ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আল-রাজি, আইএফসিসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।

তিনি বলেন, গত ৩ মাসে ইসলামী ব্যাংকে নতুন আমানত এসেছে ৪ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। সাধারণ বিনিয়োগ আমরা ১০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এনেছি। বিদেশি দায় পরিশোধ করেছি ১ হাজার ৭০২ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এটা ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের ২০০ মিলয়ন ডলার বা ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া ৭২০ কোটি টাকার এলসি ওভারডিউ রয়েছে। আগামী মাসে আরও ১৪০ মিলিয়ন ডিউ হওয়ার কথা রয়েছে।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স মোট রেমিট্যান্সের ৩০ শতাংশ ছিলো। সেটা এক সময় ১৬ শতাংশে নেমে যায়। এখন আশার দিক হচ্ছে রেমিট্যান্স আরও ২০-২২ শতাংশে উঠেছে। এটা আগামীতে আরও ভালো হবে। গত ৩ মাসের আমাদের ১০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে আমাদের নিজস্ব এলসি পেমেন্ট করা হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে অন্য ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। আমরা আশা করছি আমাদের মাধ্যমে আমদানি আরও বাড়বে। আপতত আমরা খুবই সংযত আছি। আমরা নতুন কোন ঋণ বিতরণ করছি না। 

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৩৯৫টি, উপ শাখা আছে ২৫০টি এবং ২ হাজার ৭০০ এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট রয়েছে। এই এজেন্ট ব্যাংকগুলোতে আমরা ৩জন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করবো। এই এজেন্ট আউটলেটগুলো সেমি সাব ব্রাঞ্জ হিসেবে কাজ করবে। যারা আমানত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবেন। একই সঙ্গে একটি বড় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা মানুষের ধারে যাওয়ার জন্য সব ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করবো। আশার দিকে হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থার কোন কমতি নেই।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নিরূপনে ৪টি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অডিট ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে। তারা ইতোমধ্যে অডিটের কাজ অনেকদুর এগিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংক আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করবে। ওই সময়ে সংস্থাটিকে আমরা ভালো মানের তথ্য দিতে পারবো। তাদের কাজ করতেও সুবিধা হবে। আমরা ইতোমধ্যেই আরটিজিএস, এনপিএসবি ও ইএফডিএনের কার্যক্রম চালু করে দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা আমাদের ব্যাংক থেকে সব ধরণের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। আমাদের এটিএমগুলোতে টাকা পেতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। 

চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা গ্রাহক এবং বিদেশি গ্যারেন্টার ব্যাংকগুলোর আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি। আমরা এস আলমের উৎপাদনরত কোম্পানির এলসিও করছি। এস আলমের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু তার কোম্পানির সিএফ ওদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয় আমাদের। ঋণ আদায় সব রকম প্রচেষ্টায় চলছে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ।

Share This Article


বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে এ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন

বৃহস্পতিবার লেনদেনের নেতৃত্বে ওরিয়ন ইনফিউশন

বুধবার দর পতনের নেতৃত্বে খান ব্রাদার্স

বুধবার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে এইচ.আর. টেক্সটাইল

বুধবার লেনদেনের নেতৃত্বে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ

রোববার দর পতনের নেতৃত্বে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

রোববার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে সোনারগাঁও টেক্সটাইল

রোববার লেনদেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন

ব্র্যাক ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ দাবি

এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি, ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

বৃহস্পতিবার দর পতনের নেতৃত্বে নিউলাইন ক্লোথিংস

বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধির নেতৃত্বে স্টাইলক্র‌্যাফ্ট লিমিটেড