আইএমএফ সন্তুষ্টির পরিকল্পনা তৈরি করছে রাজস্ব বোর্ড
আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে পিছিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর পিছিয়ে থাকার কারণে সম্প্রতি অসন্তোষও প্রকাশ করেছে আর্ন্তজাতিক ঋণ প্রদানকারী এই সংস্থা। এই পরিস্থিতে আইএমএফের শর্ত মানার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এনবিআর। পুরো অর্থবছরে যেভাবে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা হবে, তার একটি কর্মপরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও আইএমএফ শুরু থেকে রাজস্ব অব্যাহতি কমিয়ে আনার জন্য তাগাদা দিয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি এনবিআর বেশকিছু পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দিয়েছে। নতুন করে ভোজ্যতেলের আগাম ভ্যাট কমানোরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। এতে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
জানা গেছে, আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এই ঋণের দুটি কিস্তি দিয়েছে সংস্থাটি। পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকা সফরে আসবে আইএমএফ মিশন। এই মিশন সামনে রেখে সংস্থাটির শর্ত পূরণের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা আগামীকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। ওই বৈঠকে আইএমএফের শর্ত পুরণের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে বৈঠক সূত্র। এর আগে আইএমএফের শর্ত মেনেই এনবিআর চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেশি শুল্ক কর বসিয়েছে। এর ফলে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়বে বলে আশাপ্রকাশ করেছিল এনবিআর। এখন ঋণের শর্তের আলোকে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট খাতে কীভাবে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় করা হবে, তার রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য আগামীকালের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআরের চেয়ারম্যান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মনোনীত কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন।
এনবিআরের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের তা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমানে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। আইএমএফ চায় এটাকে বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় এ লক্ষ্য এনবিআরের জন্য চ্যালেঞ্জের। তা সত্ত্বেও সংস্থাটি কিছু কৌশল ঠিক করেছে। এসব কৌশল বাস্তবায়ন করা গেলে আইএমএফের শর্তমতো কর-জিডিপি অনুপাত বাড়বে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে রাজস্ব ঘাটতি। এই বাস্তবতায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন অত্যন্ত কঠিন বলেও মনে করেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তারা কালবেলাকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করা চ্যালেঞ্জের। এখন পর্যন্ত আদায় অনেক কম। ব্যবসা-বাণিজ্যও আগের মতো গতিশীল নয়। তবে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরন না হলেও কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।
আগামীকালের বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, আইএমএফের শর্তপূরণের বিষয়টি নিয়ে পুনআলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ লক্ষ্যই ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। আইএমএফের লক্ষ্য নিয়ে কোন সমস্যা হবে না বলেও মনে করে এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭কিস্তিতে অনুমোদিত আইএমএফের ঋণ ছাড়ে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরের জন্য শর্ত রয়েছে ৩৮টি। এসব শর্ত ও সংস্কার প্রস্তাবের একটি দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে ঋণ ছাড় পিছিয়ে যেতে পারে। তাই পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত মানার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও নিশ্চিত করেছে এনবিআর সূত্র।