চট্টগ্রামে ৭৯২ বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, পটিয়া ও অন্যান্য উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের চিত্র ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২,২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৯২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই এবং সহকারী শিক্ষক পদ খালি রয়েছে ১,৩৬২টি। এর ফলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষকরা।
প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য:
- ফটিকছড়ি উপজেলায় ২২৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।
- পটিয়া উপজেলায় ১৫২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৭টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে।
সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা সংকট:
- ফটিকছড়ি উপজেলায় ১১০টি সহকারী শিক্ষক পদ খালি রয়েছে।
- পটিয়া উপজেলায় ৯৩টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য।
- উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা পদের সংখ্যা কম থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা এককভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপর নির্ভরশীল।
শিক্ষার গুণগত মানের উপর প্রভাব:
শিক্ষাবিদদের মতে, প্রধান শিক্ষক না থাকলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের পদ খালি থাকলে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি, ক্লাস ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
পদ খালি থাকার কারণ:
প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি সম্পর্কিত মামলা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার কারণে পদগুলি খালি পড়ে রয়েছে। এছাড়া, নিয়োগ বিধিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে হয়নি।
শিক্ষকরা জানান:
একাধিক সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে তারা একসঙ্গে ক্লাস নেওয়া, দাপ্তরিক কাজ করা এবং বিদ্যালয়ের অন্যান্য দায়িত্ব সামলাতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
অংশীদারদের মতামত:
- পটিয়া উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, "৯ জনের কাজ আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে, এটা অত্যন্ত কষ্টকর।"
- চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান জানান, "পদ খালি থাকার বিষয়টি বারবার কর্তৃপক্ষের নজরে আনার পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি।"
- ড. আবু শাহীন মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জানান, "মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে, যাতে পদোন্নতি এবং সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে শূন্যপদ পূর্ণ করা যায়।"
চট্টগ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক সংকট এবং শূন্যপদ নিয়ে সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে, যা শিক্ষার গুণগত মানে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। শূন্যপদ দ্রুত পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া জরুরি।