‘তোদের মতো খারাপ কলেজ থেকে আসি নাই, ভার্সিটি থেকে এসেছি’
সাত কলেজের ২০২২-২৩ সেশনের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন ঢাকা কলেজ কেন্দ্রের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইডেন কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অশিক্ষকসুলভ মন্তব্য ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) ‘প্রিন্সিপাল অব ইকোনমিকস’ পরীক্ষার সময় এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক বেলাল হোসাইন তাদের প্রতি অবমাননাকর ভাষায় মন্তব্য করেছেন। তাদের ভাষ্য, ওই শিক্ষক বলেন, ‘তোদের মতো খারাপ কলেজ থেকে আসি নাই, ভার্সিটি থেকে এসেছি’।
ইডেন কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আশরিফা জাহান আনিশা অভিযোগ করে বলেন, ‘রবিবার আমাদের ‘প্রিন্সিপাল অব ইকোনমিকস’ কোর্সের পরীক্ষা ছিল। ঢাকা কলেজ কেন্দ্রের নতুন ভবনের ৫০২ নম্বর রুমে আমার সিট পরে। আমাদের কলেজের (ইডেন কলেজ) একই বিভাগের তিনজনের এক বেঞ্চে সিট পরে। পাশাপাশি আরও ২ বেঞ্চেও একই সিট প্ল্যান ছিল। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সিট প্ল্যান অনুযায়ী এর আগেও একই সিটে বসে ২টি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা চলাকালীন ডিউটিতে থাকা শিক্ষক আমাদের খাতায় সাইনও করেন।’
তিনি বলেন, ‘গতকালকেও আমরা একই সিটপ্ল্যানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। পরীক্ষা শুরু হওয়ার দেড় ঘন্টা পর ডিউটিতে থাকা একজন শিক্ষক আমাদেরকে এসে বলেন এক ডিপার্টমেন্টের যারা একসাথে বসেছো তারা দাঁড়াও। আমার বেঞ্চের ৩ জনসহ ওই কক্ষে মোট ৭ জন দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর ওই শিক্ষক আমাদের কাছে খাতা চাইলে আমরা খাতা তাকে দিয়ে দেই। প্রায় ১ ঘন্টা আমাদের খাতা রেখে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাতা নেওয়ার সময় আমরা জানতে চাইলাম কেন আমাদের খাতা নেওয়া হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন, তোমরা ক্রাইম করেছো। কী ক্রাইম করেছি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তোমরা এক বেঞ্চে বসে ক্রাইম করেছো। স্যারকে আমরা জানাই, এর আগেও আমরা একই বেঞ্চে বসে আরো দুইটা পরীক্ষা দিয়েছি। আমরা তো নিজেরা সিটপ্ল্যান করে বসিনি। আপনারা (কর্তৃপক্ষ) যেভাবে সিটপ্ল্যান করেছেন আমরা সেভাবেই বসেছি। এর আগে ডিউটিরত কোন শিক্ষক তো কিছু বলেননি৷’
আনিশা বলেন, আমরা আগে কেন বিষয়টি কাউকে জানাইনি সেটি জানতে চান ওই শিক্ষক। আমরা জানাই, আগের পরীক্ষাও এভাবে দিয়েছি কেউ জানতে চায়নি, কিছু বলেওনি। নিজে থেকে কেন জানাবো। আপনারা সিটপ্ল্যান করছেন, এখানে আমাদের দোষ কি?’
জানা গেছে, এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক তাদের ‘তুই-তুকারি’ করে অকথ্য ভাষায় কথা বলা শুরু করেন। পাশাপাশি ওই শিক্ষক সরাসরি এক্স ফেইল করে দেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোদের মত খারাপ কলেজ থেকে এখানে আসি নাই, আমি ভার্সিটি থেকে এসেছি।’
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ভুক্তভোগী আরেক নারী শিক্ষার্থী জানান, একজন ভার্সিটি থেকে পাস করা শিক্ষকের ভার্সিটি সমপর্যায়ের স্টুডেন্টদের সাথে এমন আচরণ কোনো ভাবে কাম্য নয়। আমরা যদি নকল করতাম বা কোনো অপরাধ করতাম তাহলে এমন ব্যবহার কিংবা এক ঘণ্টা খাতা নিয়ে রাখা ঠিক ছিল। কিন্তু কোনো দোষ না করেও আমাদের এভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে, পরীক্ষার হলে ১ ঘণ্টা সময় নষ্ট করেছে। এ কারণে যদি আমাদের রেজাল্ট খারাপ হয় এর দায় ভার কে নেবে?
এ ব্যাপারে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম ইলিয়াস গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নয়, খোঁজ নিচ্ছি। যদি এমন ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি দাবি করেন, কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচারণ করার কথা নয়।
নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ২০২২-২৩ সেশনের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে রাজধানীর ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র বরাবরের মতো ঢাকা কলেজে পরেছে।
প্রতিবারের মতো ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষই সিটপ্ল্যান করেন। রোববার কলেজের নতুন ভবনের ৫০২ নম্বর কক্ষে প্রথম বর্ষের ইডেন কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘প্রিন্সিপাল অব ইকোনোমিকস’ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।