ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের খবরে ঢাবিতে আনন্দমিছিল
আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার খুশিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত পৌনে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশের আয়োজন করে প্লাটফর্মটি। এর আগে, ক্যাম্পাসে একটি আনন্দ মিছিল করে তারা। এরও আগে রাত ৮টার থেকেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ভিসি চত্ত্বরে বিক্ষোভ শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের 'এই মুহুর্তে খবর এলো, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘এই মুহুর্তে খবর এলো, সন্ত্রাসী লীগ নিষিদ্ধ হলো', ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, সন্ত্রাস লীগ গেলি কই’, ‘এই মুহুর্তে খবর এলো, ক্যাম্পাস সন্ত্রাসমুক্ত হলো’, ছাত্রলীগ গর্তে, শেখ হাসিনা ভারতে’, 'মুজিববাদ মুরদাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ বলেছিল সাত মিনিটে আমাদেরকে ক্যাম্পাস ছাড়া করবে। আজ আমরা দেখেছি, তারা মধুর ক্যান্টিনে এসে পা কাঁপতে কাঁপতে ৪৬ সেকেন্ডে পালিয়েছে। আজ এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিষিদ্ধ করায় তারা গর্তে লুকিয়েছে। তাদেরকে গর্ত থেকে টেনে বের করে সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিচার করতে হবে। একটা একটা ছাত্রলীগ ধরে ধরে গণধোলাই দেওয়া হবে। সরকারকে বলতে চাই, চিরুনি অভিযান চালিয়ে একটা একটা ছাত্রলীগ ধরুন আর জেলে ভরে বিচার করুন।
সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, শুধু ছাত্রলীগই নয়, বরং আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে, মুজিববাদের কবর রচনা করতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের মতো সন্ত্রাসী দলের কোনো অস্তিত্ব আর থাকবেনা। যারা দেশের মানুষকে দীর্ঘ ১৬টা বছর রাজনীতি করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে তাদের আর রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারেনা।
সমন্বয়ক এম এ সাঈদ বলেন, চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের কালপ্রিট ছাত্রলীগকে আমরা নিষিদ্ধ করতে পেরেছি। আমরা চাই, এখন আওয়ামী লীগ তথা মুজিববাদের সকল শাখা-প্রশাখা নিষিদ্ধ হোক। সকলকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আপনারা দেশের আনাচে-কানাচে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের খুশিতে মিষ্টি বিলান।
সমন্বয়ক আশরেফা বলেন, কি বলে আমার আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। আজ আমাদের আনন্দের দিন। আমরা এ পর্যন্ত যতদিন অধিকার আদায়ের জন্য কোনো কর্মসূচি দিয়েছে ততদিনই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এমনকি হাসপাতালে গিয়েও হামলা করেছে। আজ তাদের পরাজয় হয়েছে।
সমন্বয়ক আহনাফ সাঈদ খান বলেন, আমরা আজও বিশ্বজিৎ ও আবরার ফাহাদসহ নির্যাতিত মানুষদের ভুলিনি। সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ আজ নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। নিষিদ্ধ হওয়াই কোনো সমাধান নয়। তাদের প্রত্যেক সন্ত্রাসীকে ধরে এনে বিচার করতে হবে। এখনো সাধারণের আড়ালে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন জায়গায় মিশে আছে। তাদের নামে মামলা হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা। এটা দুঃখজনক।
সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আজকে আমাদের জীবনের অন্যতম আনন্দের একটা দিন। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ ছিলো না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের উপর হামলা করেছে, সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগের মত সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য।
রিফাত রশিদ বলেন, ৫ আগস্টের পরে ছাত্রলীগ গর্তে লুকিয়েছে। তাদের নেত্রী ভারতে পালিয়ে গেলেও তাদেরকে এদেশে ফেলে গেছে। দেশের সকল ছাত্র-জনতাকে বলতে চাই, আপনারা একটা একটা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গর্ত থেকে টেনে তুলে ধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করবেন। একজনও যেনো আইনের হাত থেকে রক্ষা না পায়।
ঢাবির এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আজ আমার জন্মদিন ছিলো। আজকের এই দিনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেরা একটি উপহার দিয়েছে। এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।