ভোগ্যপন্যের বাজারে গরিবের কান্না
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বন্যাকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে ভোগ্যপন্যের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগ্যপন্যের বাজারে চলছে এক ধরণের অস্থিরতা। নিম্ম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবজি বাজারও। সবজি বাজারে গেলেই কেজি প্রতি গুণতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। এজন্য বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষকে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম সবজি কিনতে দেখা গেছে। তবে সপ্তাহ জুড়ে ১৮০ টাকায় ডজন বিক্রি হলেও সরবরাহ বাড়ায় কমেছে কিছুটা কমেছে ডিমের দাম। যদিও এর প্রভাব পড়েনি পাড়া-মহল্লার দোকানে। রাজধানীর কারওয়ান বাজর, মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে। সরকার নির্ধারিত দর হওয়ার কথা ১৪৩ টাকা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে ৭ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে ডিম। দুই দফায় বন্যা ও বছর ব্যাপী অতি বৃষ্টির ফলে ফসল নষ্ট হওয়ায় সব ধরনের সবজি এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে পটল, ঝিঙ্গা, ঢ্যাড়স ও চিচিঙ্গার মতো সবজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে প্রতি কেজি কাঁচা সবজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য এই দাম সহনীয় নয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ায় গেল দুই দিন থেকে ডিমের দাম কিছুটা কমছে। কিন্তু চলতি বছর বৈরি আবহাওয়া, দুই দফায় বন্যার ফলে কয়েকশো বিঘা ফসলের জমি নষ্ট হওয়ায় সবজির বাজার চড়া যাচ্ছে। পাশাপশি অন্যান্য বছর কার্তিকের প্রথম সপ্তাহ থেকে শীতের আগাম সবজি বাজারে আসলে সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু এবারে আগাম সবজি তেমন একটা আসেনি। সিম, ফুলকপির মতো দুই একটা সবজি এলেও তাও বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন বলেন, গেল তিন-চারদিন আগে বাজারে ডিম ছিলো না। ফলে প্রতিপিস ডিম ১৫ টাকা দরে এবং ১৮০ টাকায় এক ডজন ডিম বিক্রি করেছি। মাঝে ভোক্তার অভিযানের ভয়ে দোকান বন্ধ রাখলেও দুই দিন পর দোকান খুলেছি। তাছাড়া পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়ায় আমরা কম দামে ডিম বিক্রি করতে পারছি। বর্তমানে প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ টাকা করে।
সরকারের নানা উদ্যোগে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও এখনো কমেনি মাছ, মাংসসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম। চড়া দামে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা করে। ব্রয়লার মুরগির মতো প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরবরাহ ঘাটতি না থাকলেও সব ধরনের মাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০, চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০, কার্প জাতীয় মাছ ৩৫০-৩৮০, চাষের শিং ৪০০, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০-৭০০ টাকায়।
মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাজারে মাছের সরবরাহ সাভাবিক থাকলে সব ধরনের মাছের দাম বেশি। মূলত মাছ উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ায় বাজারেও এর একটা প্রবা রয়েছে। ফিসারি থেকেই কার্প জাতীয় মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকার বেশি। তাছাড়া সবসময় নদীর মাছের চাহিদা একটু বেশি থাকে। কিন্ত গত কয়েক মাস থেকেই নদীর মাছের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তাই ঘাত থেকেই বেশি দামে মাছ কিনতে হয়।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৮০ থেকে ১৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি না থাকায় বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষকে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম সবজি কিনতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। এছাড়া মুলা ৮০, পটোল ৮০, বরবটি ১২০, গোল বেগুন ১৬০, লম্বা বেগুন ১২০, টমেটো ১৮০ এবং করলা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা সরকারি চাকুরিজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, কিছুদিন ধরে সবজির দাম বৃদ্ধি হওয়ায় বাজার করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। খুব হিসাব করে সবজি ক্রয় করছি। আগে যেগুলো এক কেজি করে নেওয়া হতো সেগুলো ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম করে নিচ্ছি। এভাবে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
নিউমার্কেটের সবজি ব্যাবসায়ী বলেন, বন্যা ও সারাবছর বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে সবজির বাজার চড়া। তবে আশা করছি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
এ দিকে যশোরে কাঁচা সবজির আড়তে সিম বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। ঢাকায় আসাসহ সিমের প্রতি কেজি খরচ হয় ৫ থেকে ৬ টাকা। সব মিলিয়ে সিমের দাম পড়ে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। কিন্তু ঢাকার খুচরা বাজারে সিম বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।