বিশৃঙ্খল সড়কব্যবস্থা, শৃঙ্খলা ফেরাতে জোর প্রচেষ্টায় পুলিশ
দুপুর দেড়টা শাহবাগ মোড়। রাস্তায় যাহবাহনের সংখ্যা ও চাপ অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম।ব্যস্ত নগরীতে সবাই যার যার গন্ত্যবে পৌঁছাতে ছুটছে অবিরাম। তবে চোখ আটকে গেল একটা লেখায়। শাহবাগ মোড় থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের প্রধান সড়কে 'রিক্সা চলাচল নিষেধ' লেখায়।
দেখা গেছে, দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও সার্জেন্ট রিক্সা ঠেকাতে ব্যস্ত। রিক্সা চালক ও যাত্রীদের বুঝাতে খেতে হচ্ছে হিমশিম।
এ নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট মোহাইমিনুল জানায়, কেউ নিষেধ মানতে চান না। চলাচলে নিষেধের কথা বললে উল্টো নানান যুক্তি ও উযুহাত দাঁড় করান যাত্রী ও চালকরা।
যাত্রী ও রিক্সা চালকরা বলছেন, এটা তাদের জানা নেই, তাই চলে আসছে। এখন ঘুরে যেতে গেলে অনেক সময় লাগবে।
বাংলামোটরগামী এক যাত্রী বলছে, আইন সকলের মানা উচিত। রাজধানীতে যানজটে নাকাল সবাই। সময় হাতে নিয়ে বের হলে বিড়ম্বনা এড়ানো যায়। আমার হাতে সময় ছিল বলে ট্রাফিক বলায় রিক্সা ঘুরিয়ে যেতে বলেছি।
এমনই দৌরত্ম্য ছিল রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিক্সা ও অটোচালকদের। নিয়ম মানার তোয়াক্কায় সকলের মধ্যে বেশি ছিল। সিগন্যাল ভেঙে বাহন নিয়ে রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে রিক্সা, মোটর সাইকেল।
এসময় কথা হয় রিক্সাচালক আকাশের সাথে। রাজধানীতে রিক্সা চালায় ৬ বছর । কোন সড়কে রিক্সা নিয়ে যাওয়া যাবে আর কোন সড়কে যাওয়া যাবে না। এটি তার জানা নেই। তাই বলার পরেও নিয়ম ভেঙেছেন তিনি। তবে আইন ভঙ্গ করায় অনুশোচনাও আছে এই রিক্সা চালকের।
রিক্সার পাশাপাশি বাইক, বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চালকরা নিয়ম ও আইন ভাঙ্গায় কম যান না।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাজধানীসহ সারাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সড়কে দেখা দিয়েছিলো দীর্ঘ যানজট। পুলিশের অনুপস্থিতিতে যাহবাহন চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়ে যাত্রী-চালকরা। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে লেগেছে দীর্ঘ সময়।
পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আস্তে আস্তে কাজে ফেরে পুলিশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কাজে ফিরলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। ৫ আগস্ট সারাদেশে পুলিশের হামলায় মনোবল একবারে শূণ্যের কোঠায়। তাছাড়া তাদের কমান্ডও মানছে না সাধারণ জনগণ।
তবে সড়কে শৃঙ্খল ফেরাতে বদ্ধপরিকর বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোঃ ময়নুল ইসলাম। দৃশ্যমান উন্নতি না হলেও শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ।
রাজধানীর শাহবাগসহ চাঁনখারপুল, আজিমপুর বাসষ্ট্যান্ড, নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব, বাংলা মোটর কাওরান বাজার,ফার্মগেট ও বিজয় স্মরণী ঘুরে দেখা গেলে বেশির ভাগই নতুন দায়িত্বর ট্রাফিক কর্মকর্তরা। অনেকেই দেখা গেছে, তাদের নির্দেশনা না শুনছেন। এতে হচ্ছেন বিব্রত । তাই নিয়ম মানতে তাদের বুঝাচ্ছে দায়িত্বরতরা।
এ নিয়ে চাঁনখারপুলে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শিবলী বলেন, রাজধানীতে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এই মোড়ে সবসময় জটলা বেঁধে থাকতো। ব্যস্ততম এই সড়কে দুটি রাস্তার একদিকে হয়ে যাওয়ায় গুলিস্তান ও হানিফ ফ্লাইওভারগামী যানবাহনে চাপ থাকে বেশি। এক মুখী ও চাপা হওয়ায় ধীর গতিতে যেতে হয় যানবাহন। এর কারণে জ্যামের সুষ্টি হয়। কারণ নামার রাস্তায় ও উঠার যায়গা একটা। হানিফ ফ্লাইওভারে দীর্ঘ যানজট কমাতে তাই এখন সব গাড়ি চাঁনখারপুল মোড় দিয়ে ক্রস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে জটলা ও জ্যাম কিছুটা কমেছে। তবে মোড়ে যাত্রী উঠানো ও রিক্সা মোটর সাইকেল দাঁড়ানোয় জটলা বাঁধে। সরে যেতে বললে তারা সরতে চায় না বিভিন্ন বাহানা দেখায়। পুলিশকে সকলে সহযোগীতা না করলে সড়কে যানজট ও শৃঙ্খলা ফেরানো কষ্ট সাধ্য।
একই সুরে কথা বলল দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য তরিকুল ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সদস্য ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নাজমুল হাসান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। সড়কের একমাস আগের অবস্থা ও পরের অবস্থা কি? সেটা আপনারাই দেখছেন। আমরা কাজ করছি মূল্যায়ন করবেন আপনারা।
তবে এই বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এর আগেও আমরা ১/১১ এ সেনা সমর্থিত সরকার দেখেছি। তারা ক্ষমতা নেয়ার পরে সারাদেশে সব সেক্টরে জঞ্জাল পরিষ্কার করে দেশকে ঝকঝকে করেছে। সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় পুলিশ একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। তাতে সব সেক্টরের চাঁদাবাজরাও গা ঢাকা দিয়েছিলো।
তবে এবারের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি ভিন্ন মনে হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী প্রশাসনের সাথে মিলে সঠিকভাবে কাজ করছে না। তারা যদি প্রশাসনের সাথে মিলে কার্যকর ভূমিকা নিতো। তাহলে পরিস্থিতি আরও দূর উন্নতি লাভ করত। সেই সাথে সড়কে নতুন বাস নামানোর পাশাপাশি পুরোনোগুলো ডাম্পিং করা। রিক্সা চলাচল নিয়ন্ত্রিত করতে পারলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরানো সম্ভব বলেও জানান তিনি।