গভর্নরের সঙ্গে বিএবি এবিবির বৈঠক
দ্রুত তারল্য সহায়তা চায় দুর্বল ব্যাংক
# আদালতে স্থগিতাদেশ নিয়ে ঋণ খেলাপি বন্ধের পদ্ধতি বাতিল চায় বিএবি, গভর্নরের সায়
# নীতি প্রণয়নে বিএবি এবিবিকে রাখার দাবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্রুত তারল্য সহায়তা চেয়েছে দুর্বল ১০টি ব্যাংক। বুধবার বিকালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা এই সহায়তা চান।
বৈঠকে তারল্য সহায়তা নিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সিদ্ধান্ত তা দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য আলাদা গাইড লাইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা ডিপার্টমেন্ট করারও দাবি জানানো হয়েছে। তবে তাদের এসব দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর কোনো মন্তব্য করেননি।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি তৈরিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডকে (এবিবি) যুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, একটি স্টেকহোল্ডার কনসাল্ট্রেশন করা যেতে পারে। ব্যাংক খাতের নীতি প্রণয়নে সে স্টেকহোল্ডার কনসাল্ট্রেশনের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
আর রিট করে ঋণ খেলাপি থেকে রেহাই পাওয়ার যে প্রবণতা সেটা বন্ধেরও দাবি জানান বিএবি নেতৃবৃন্দ। তাদের এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে গভর্নর বলেছেন, এজন্য এনপিএল রেগুলেটরি পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া অর্থঋণ আদালতের যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্যও দাবি জানান বিএবি নেতৃবৃন্দ। এক্ষেত্রে গভর্নর বলেছেন, অর্থঋণ আদালতকে কার্যকর করতে হবে। এজন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলব।
এসময় বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পলিসি বাস্তবায়ন করে সেগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে করার দাবি জানান বিএবি নেতৃবৃন্দ। এক্ষেত্রে গভর্নর বলেছেন, আন্তর্জাতিক পলিসি স্ট্যান্ডার্ডকে ফলো করে এগুলো করা হয়। তাই বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যারা কাজ করে তাদেরকে আন্তর্জাতিক মানে পৌছতে হবে।
বিএবি জানিয়েছে, অর্থঋণ আদালতে প্রোপার্টি বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এটা দূর করার দাবি করেছে বিএবি।
এক্ষেত্রে গভর্নর বলেছেন, অর্থঋণ আদালতকে আরও বেশি কার্যকর করতে হবে। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বসবে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অপরদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও স্টাফদের বেতন বিষয়ে বাংলাদেশ যে হস্তক্ষেপ করে সেটা ব্যাংকের উপর ছেড়ে দেওয়ার দাবিও জানান বিএবি নেতৃবৃন্দ। আর গভর্নরও তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, এগুলো ধীরে ধীরে ব্যাংকের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর ঋণ জালিয়াতির কারণে ডুবতে থাকা ব্যাংকগুলো শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ১০টি দুর্বল ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেসব ব্যাংক এখন তীব্র তারল্য সংকটে রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোও পুনর্গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।
এ সময় বিএবি নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএবি ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, বিএবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, বিএবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার মুনিম হাসান, সিটিজেন্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব, সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন, ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক, মিডল্যান্ড ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ বাশার, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক ইমরান ইকবাল, পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিচালক ফেরদৌস আলী খান ও ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।