জামায়াত নিষিদ্ধে কার লাভ কার ক্ষতি
দেশের বৃহৎ ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াত ও শিবিরকে ‘নিষিদ্ধ দল’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এই জামায়াতের সকল সহযোগী সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠার পর চতুর্থ বারের মতো নিষিদ্ধ হলে উপ মহাদেশের আলোচিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব মওলানা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত দলটি। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর অনেকেরই প্রশ্ন এতে আসলে কারা বেশি লাভবান হলেন।
জানা যায়, ২০১১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপর সরকার বিভিন্ন সময়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের কোট সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার দায় জামায়াতের উপরই চাপিয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে সরকার এসব সহিংসতার কারণে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে। যদিও জামায়াত বরাবরে মতোই বলছে এর সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
তথ্য বলছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই জামায়াতের অভ্যন্তরে নতুন দল গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু জামায়াতের প্রবীন নেতারা বিরোধীতা করার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও মীর কাশেম আলীর পরামর্শে আলাদা দল গঠনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জামায়াত। যদিও এখনই নতুন দল নিয়ে আসা হবে কিনা তা জানা যায়নি।
সূত্র বলছে, জামায়াতের নবীন নেতার অনেকদিন থেকেই দলটির বিলুপ্তির পক্ষে। কিন্তু প্রবীন নেতাদের বিরোধীতা তা সম্ভব হয়নি। এমনকি এই ইস্যুতে শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। আর দল থেকে পদত্যাগ করেছে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মতো জামায়াতের শীর্ষ নেতাও। তাই জামায়াতের মধ্যেই অনেক নেতা চাচ্ছিলেন দলটিকে সরকার নিষিদ্ধ করে দিক। এতে নতুন দল গঠনে প্রবীন নেতাদের পক্ষ থেকে আর কোন বাধা থাকবে না। অর্থাৎ জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটির সংস্কারপন্থী নেতাদেরই সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয়েছে।
এ বিষয়ে জামায়াতের একজন সংস্কারপন্থি নেতা বলেন, আমাদের নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি আগে থেকেই আছে। তবে নিষিদ্ধ হওয়ায় এখনই নতুন কোন দল নিয়ে আসা হয়তো হবে না। সময় নিয়ে প্রেক্ষাপট বুঝে তারপর নতুন দল গঠন করা হবে। এছাড়া জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ায় কোন প্রতিক্রিয়া না দেখাতেও কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি কর্মীদের সামাজিক মাধ্যমে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখানোয়ও আছে নিষেধাজ্ঞা।
শুধু জামায়াতের নবীন নেতারা নয়, নিষিদ্ধ হওয়ায় সুবিধা হবে বিএনপিরও। আপাতত জামায়াতের শীর্ষ নেতা ব্যতিত অন্য কর্মীদের বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে জামায়াতের পক্ষ থেকে। এমনকি অপেক্ষাকৃত অপরিচিত কর্মীদের ছাত্রদল ও বিএনপিতে যোগ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এতে বিএনপির আন্দোলন সামনে আরও জোরালো হবে। পাশাপাশি সারাদেশে জামায়াত কর্মীরা এখন বিএনপির ব্যানারেই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় রাজনীতিতে বিএনপির এক্টিভিটিজও বাড়তে পারে। তবে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ। কারণ এতোদিন জামায়াত দল হিসেবে রাজনীতি করার কারণে বিএনপির সব কর্মসূচিতে তাদের নেতাকর্মীরা অংগ্রহণ করতে পারতো না। এখন থেকে এর কোন বাধা রইলো না। পাশাপাশি ভবিষ্যতে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতার আর কোন পথও থাকবে না। এছাড়া জামায়াত যদি অন্যকোন দল গঠন করে বা ছোট কোন দলের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে নেয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য তা বড় ধরণের হুমকি তৈরি করতে পারে।