তলবের আগেই ব্যাংক থেকে ৮ কোটি টাকা তুলে নেন মতিউর
- মতিউরের ব্যাংক হিসেবে এখন আছে ৪ কোটি টাকা
- এ যাবৎ ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করেছেন ১১৫টি
- ব্যাংক হিসেবে মোট ছিল ১২ কোটি টাকা
- ব্যাংক হিসাবের তথ্য দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ব্যাংক হিসাবে মাত্র ৪ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। বাকি ৮ কোটি টাকা আলোচনায় আসার পরই তুলে নিয়েছেন। এ যাবৎকালে তিনি ১১৫ টি ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করেছেন। হিসাবগুলোর কোন কোনটিতে ২-৫ বার লেনদেন করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মতিউরের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। দুদক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তথ্য বলছে, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মতিউর রহমান দেশজুড়ে আলোচিত হন। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মতিউর ও তার পরিবারের দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য প্রকাশ করা শুরু করে। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজে কাজ শুরু করে। প্রাথমিক দিকেই গত ২৫ জুন দুদকের অনুরোধে মতিউর রহমান ওরফে পিন্টু, তাঁর দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাদের মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব ও শেয়ারবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ওই আটজনের ব্যাংক, এমএফএস ও বিও হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। তথ্য চাওয়ার পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে ব্যাংকগুলো থেকে তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেওয়া হয় বিএফআইইউর কাছে। তথ্য পেয়ে সংস্থাটি দুদককে ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাঠিয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ১০ জুন আলোচিত মতিউর রহমানের ব্যাংক হিসাবগুলোতে মোট ১২ কোটি টাকা ছিলো। পরে ছেলের ১৫ লাখ টাকার ছাগল ক্রয়ের বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে ৮ কোটি টাকা তুলে নেন। এরই মধ্যে বিএফআইইউ থেকে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলে বাকি অর্থ তুলে নেওয়ার সুযোগ পাননি। এতে তার ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি টাকা থেকে যায়।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মতিউর রহমানের মুঠোফোনে গতকাল একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে এখন পর্যন্ত ১৬টি বিও হিসাবের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে মতিউর রহমানের নামে চারটি, তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে দুটি, প্রথম পক্ষের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে দুটি, প্রথম পক্ষের মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতার নামে তিনটি ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর নামে পাঁচটি বিও হিসাব রয়েছে। তবে তাঁর তিন সন্তানের নামে এখন পর্যন্ত কোনো বিও হিসাবের হদিস মেলেনি।
শেয়ারবাজারে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিও হিসাব ও শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। দুদকের চিঠি পাওয়ার পর বিএসইসি এই প্রতিষ্ঠানকে মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিও হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়। এর ফলে এসব বিও হিসাব ব্যবহার করে এখন আর কোনো লেনদেন করা যাবে না।
মতিউর রহমান কিছুদিন ধরে আলোচনায় আছেন তার ছেলের কারণে। কোরবানির ঈদে সাদিক অ্যাগ্রো নামের একটি খামার থেকে তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকার বিষয়ে একের পর এক খবর প্রকাশিত হতে থাকে। এই সরকারি কর্মকর্তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ওরফে লাকী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।
মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাকে এনবিআর থেকে সরিয়ে এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। সেখান থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়েছে।